মুমিনের অন্তকালের চিন্তা ও প্রস্তুতি


admin প্রকাশের সময় : জুন ১৮, ২০২৫, ৭:৫৫ অপরাহ্ন / ২৮
মুমিনের অন্তকালের চিন্তা ও প্রস্তুতি

মৃত্যুর পরবর্তী জীবন বা অন্তকাল বলতে বোঝায় সেই অনন্তকালীন জীবন যেটা মৃত্যুর পর শুরু হয়। এই অন্তকাল মানুষের জন্য এক অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা, যেখানে কবর, কিয়ামত, হাশর-নাশর, আমলের হিসাব ও জান্নাত-জাহান্নাম নিয়ে ভাবনা অন্তর্ভুক্ত থাকে। মানুষের সৃষ্টি ও জীবনের মূল লক্ষ্য হলো এই পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেয়া। জন্ম থেকে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত মানুষের সকল কর্ম ও ফলাফল পরকালের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

মৃত্যু এক অপ্রতিরোধ্য বাস্তবতা, যা প্রত্যেক প্রাণীরই গ্রহণ করতে হয়। মৃত্যুর মাধ্যমে দুনিয়ার জীবন শেষ হয় এবং শুরু হয় পরকাল, যেখানে স্থায়ী আনন্দ বা শাস্তির বসবাস। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ পালন করে, তারা জান্নাতের বাসিন্দা হবে; আর যারা অবজ্ঞা করে, তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত। জান্নাত হলো শান্তি ও চিরস্থায়ী সুখের ধন, আর জাহান্নাম কঠোর শাস্তির স্থান।

পরকালের স্মরণ মানুষের এই পৃথিবীর জীবনকে সুশৃঙ্খল করে, আত্মসংযম ও নৈতিকতা গড়ে তোলে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বারবার পরকালীন জীবন ও দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মানুষকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, “আল্লাহ মানুষের জন্য নানা দৃষ্টান্ত দিয়েছেন যেন তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।” (সূরা ইব্রাহিম: ২৫)

অনেকেই পার্থিব জীবনের আরাম-সুখকেই সুখ-শান্তি মনে করে। কিন্তু প্রকৃত সুখ হলো পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের সুখ। বুদ্ধিমান ব্যক্তি সে, যে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জগতকে পিছনে ফেলে, পরকালের জন্য চিরস্থায়ী সম্পদ সংগ্রহ করে। আল্লাহ বলেন, “এ দুনিয়ার জীবন তো শুধুই খেলাধুলা আর বিনোদন; কিন্তু আখেরাতের বাসস্থলই প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানতো।” (সূরা আনকাবুত: ৬৪)

মুমিন হিসেবে আমাদের দুনিয়ার প্রতি এমন মনোভাব থাকা উচিত, যেন আমরা যাত্রাপথে এক পথচারী। রাসুল (সা.) বলেছেন, “দুনিয়ার জীবন আমার কাছে যেন এক গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়া পথচারীর মতো, সে বিশ্রাম শেষে আবার চলে যায়।” (মুসনাদ আহমাদ)

অতএব, দুনিয়ায় অবস্থান এমন হওয়া উচিত যা পরকালের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে। রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, “তুমি দুনিয়ার জীবনে এমন থাক, যেন তুমি এক পথচারী বা অতিথি।” (সহিহ বুখারি)

মৃত্যুর পর আমাদের কবর হবে প্রথম পরবর্তী অবস্থান। সেখানে কি স্বস্তি থাকবে, নাকি শাস্তির ভয়াবহতা, তা আমরা জানি না। তবে নিশ্চিত যে, দুনিয়া নয় চিরস্থায়ী আবাস। সবকিছুই এখানে অস্থায়ী। তাই পরকাল হলো প্রকৃত ও স্থায়ী জীবন, যেখানে চিরন্তন সুখ বা দুঃখ অপেক্ষা করছে।

পরকালের জন্য নেক কাজ ও ইবাদত সংগ্রহ করাই সৎ ও বুদ্ধিমান মানুষের লক্ষ। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে নিজের বাসনা নিয়ন্ত্রণে রেখে পরকালের জন্য সংগ্রহ করে, সে প্রকৃত বীরপুরুষ।” (তিরমিজি)

দুনিয়ার জীবন চলার জন্য বৈধ উপার্জন জরুরি, যা আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে হতে হবে। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, “নামাজ শেষে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর অনুগ্রহ খুঁজো এবং অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে সফল হও।” (সূরা জুমা: ১০)

তবে দুনিয়ার জীবনে এতটুকুই অর্জন করো যা পরকালের জন্য যথেষ্ট হবে। কারণ দুনিয়া হলো পরকালের ক্ষেত্র, যেখানে আমল ফলাতে হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, “দুনিয়া আখেরাতের শস্যক্ষেত্র।” (তিরমিজি)

পরকালের সুখ-শান্তি নির্ভর করে দুনিয়ায় করা কাজের ওপর। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন, তা থেকে পরকালের কল্যাণ খুঁজে বের করো, কিন্তু দুনিয়া থেকেও তোমার অংশ ভুলে যেও না।” (সূরা কাসাস: ৭৭)

সুতরাং প্রকৃত সাফল্য হলো দুনিয়া ও পরকালের সমন্বয়, যেখানে দুনিয়া পরকালীন পাথেয় সংগ্রহের ক্ষেত্র। যেমন পিঁপড়া গ্রীষ্মকালে শীতের জন্য খাবার জমায়, তেমনি মুমিনও পরকালীন দুঃখ-ভয় থেকে বাঁচতে আজকের দিনে আমল সঞ্চয় করে।

আল্লাহ সবাইকে পরকালের জন্য প্রস্তুত থাকার তৌফিক দান করুন।

ধর্ম বিভাগের আরো খবর

আরও খবর
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com