পোশাকখাতে নয়া চ্যালেঞ্জ


admin প্রকাশের সময় : জুন ২১, ২০২৫, ৯:১৪ অপরাহ্ন /
পোশাকখাতে নয়া চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা বর্তমানে একের পর এক নতুন নতুন সংকটের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ, ভারতের বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ইরান-ইসরাইল সংঘাত—সব মিলিয়ে দেশের পোশাক শিল্পে বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। এসব কারণে শিল্পখাতের স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি বড় হুমকির মুখে পড়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের পরে নানা সমস্যায় শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বিনিয়োগে স্থবিরতা তৈরি হওয়ায় অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়েছেন। তবে পাশাপাশি নতুন কিছু কারখানাও চালু হয়েছে। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং শিল্প পুলিশের তথ্যেও এই বাস্তবতার প্রতিফলন রয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, এই ধারা দীর্ঘমেয়াদে চললে অর্থনীতি বড় ধরনের সংকটে পড়বে।

উৎপাদনে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জ্বালানি সংকট। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় কারখানাগুলোর উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সরকার এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিলেও এর ওপর বাড়তি নির্ভরতা পরিস্থিতি জটিল করছে। অন্যদিকে, ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়াচ্ছে, যার নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের শিল্পেও পড়ছে।

সাবেক সরকারের আমলে শিল্প মালিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব এবং দুর্নীতির অভিযোগও শিল্পখাতের সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ঋণ প্রবৃদ্ধি ৪২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। উচ্চ সুদের কারণে নতুন বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিও কমেছে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী, সাভার-ধামরাই অঞ্চলে প্রায় ১০০টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে প্রায় ৬০ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘গ্যাস সংকট শিল্পকারখানাকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে।’ বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু জানান, ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের ফলে তেলের দামে ঊর্ধ্বগতি তৈরি হলে তার সরাসরি প্রভাব পোশাক শিল্পেও পড়বে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ এবং ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞা দেশের রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১০% বাড়তি শুল্ক ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে; ট্রাম্প প্রশাসনের স্থগিত আদেশ শেষ হলে এটি আরও বাড়তে পারে। ভারতের স্থলবন্দরে সীমাবদ্ধতা আরোপ করায় বাংলাদেশের প্রায় ৪২% রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে রপ্তানিকারকদের অনেক ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল সমুদ্রপথে যেতে হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৩%-এ নেমে আসতে পারে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিদেশি বিনিয়োগও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বিদেশি বিনিয়োগ ৭০% এর বেশি হ্রাস পেয়েছে।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘উচ্চ সুদ, গ্যাস সংকট, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা সব মিলিয়ে আমরা অভূতপূর্ব চাপে পড়েছি।’ এলএনজি আমদানির খরচও উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে তুলছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না ফিরলে বিদেশি বিনিয়োগ আসা কঠিন হয়ে পড়বে। নির্বাচনের আগমুহূর্তে রাজনৈতিক ঐক্যমত ও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ প্রয়োজন বলে তার মত।

তবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-র নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানিয়েছেন, বিগত কয়েক মাসে বিদেশি বিনিয়োগ আবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে, যা আশার সঞ্চার করছে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com